ভারত ছাড়ো আন্দোলন: ইতিহাস, কারণ ও ফলাফল

ভারত ছাড়ো আন্দোলন
ভারত ছাড়ো আন্দোলন কবে শুরু হয়?
উত্তর: ৯ আগস্ট, ১৯৪২ সালে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করেন কে?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী।

ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে বেআইনী ঘোষণা করেন কবে?
উত্তর: ৮ আগস্ট, ১৯৪২ সালে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভারতের ভাইসরয় বা বড়লাট কে ছিলেন?
উত্তর: লর্ড লিনলিথগো।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: মওলানা আজাদ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতার করা হয় কবে?
উত্তর: ৮ আগস্ট, ১৯৪২ তারিখ রাতে।

অহিংস আন্দোলন সহিংস আন্দোলনে পরিনত হয় কেন?
উত্তর: গান্ধিজী, জওহরলাল নেহেরু, আবুল কালাম আজাদসহ প্রায় সকল কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ কি?
উত্তর: বিশ্বে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ভারতের অভ্যান্তরিন জটিলতা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে জাপানের সেনাবাহিনী বার্মার রাজধানী রেঙ্গুন দখল করে নেয়। ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেস উভয় ভারতে জাপানি আক্রমণের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস কখনো চাননি ভারতবর্ষ একটা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হোক। এই চিন্তা করে গান্ধিজী এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রেরিত প্রস্তাবে ইংরেজদের দেশ ছেড়ে যেতে বলেন। শুরু হয় কংগ্রেসের ভারত ছাড়ো আন্দোলন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারী সমাজের ভূমিকা কি?
উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলন এগিয়ে নিতে নারীদের ভূমিকা অসামান্য। সুচেতা কৃপালনী, অরুনা আসফ আলি এ আন্দোলনের বৈপ্লবিক কাজকর্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন। কংগ্রেসের এই সংকটময় সময়ে উষা মেহতা গোপনে জাতীয় কংগ্রেসের বেতার কেন্দ্র পরিচালনা করতেন। এসময় মহিলা স্বেচ্ছাসেবী দ্বারা গঠিত হয় ভগিনী সেনা। ভাগিনী সেনার সদস্যরা খুবই বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রদর্শন করেছিলেন। পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকননী, আসামের ১৪ বছরের কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া প্রমুখ বিরঙ্গনা মহিলার নাম ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। গান্ধী বুড়ি নামে খ্যাত মাতঙ্গিনী হাজরা ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুক থানা দখল করার নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। বীরভূমের শান্তিনিকেতন অঞ্চলে এই আন্দোলনকে সংগঠিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন সুনিতা সেন, নন্দীতা কৃপালনী, এলা দত্ত, লাবণ্যপ্রভা দত্ত, মায়া ঘোষ প্রমুখ বিরাঙ্গনা নারী।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রানী কাকে বলা হয়?
উত্তর: অরুণা আসফ আলী কে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরা ভূমিকা কি ছিল?
উত্তর: ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুক থানা দখল করার নেতৃত্বে ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে থাকলে তিনি অন্যান্য সহকর্মীদের পিছনে রেখে নিজেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। পুলিশ তিনবার তাঁকে গুলি করলে তাঁর কপালে ও দুই হাতে লাগে। তবুও এই বিরাঙ্গনা সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন এবং শেষে মৃত্যুবরণ করেন।

গান্ধীবুড়ি নামে পরিচিত ছিলেন কে?
উত্তর: মাতঙ্গিনী হাজরা।

কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে ছিল কেন?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী ফ্রন্টে রাশিয়ার মিত্র ছিল ইংল্যান্ড। মতাদর্শগত কারণে কমিউনিস্ট দল ইংল্যান্ডের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। ভারতে শ্রমিক ধর্মঘট বন্ধ রাখে এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরে রাখে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ফলাফল কি?
উত্তর:
• এই আন্দোলনের ফলে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
• বিহারের কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ কনস্টেবলরাও চাকরি ছেড়ে আন্দোলনে সামিল হয়।
• ব্রিটিশ সরকার নেতৃত্ব বিহীন ভারতবাসীর সংগ্রামে স্তম্ভিত হয়েছিল। 
• ভারতবাসী আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এই আন্দোলনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলে।